Sunday, October 20, 2013

চলনবিলে প্রযুক্তি শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে নৌকাস্কুল ।

পোস্টটি করতে পেরে আমি নিজেকে আনন্দিতই মনে করছি । এই বিষয়ে একটি পোস্ট ইংরেজীতে করেছি কিন্ত মন মানলনা তাই আবার বাংলাতে করছি । মনেপড়ে সেই দিন গুলির কথা যখন আমারা সবাই নৌকা স্কুলে পড়তাম । দিনগুলির কথা মনে পরলেই এখন আনন্দ অনুভব করি । “নৌকায় স্কুল”  বিষয়টা ভাবতেই কেমন যেন লাগে । আমারা সাধারনত জানি নৌকা দিয়ে মানুষ যাতায়াত কারে পারাপার হয়, কিন্তু নৌকা দিয়ে স্কুল সেটা কিভাবে? নৌকাকে জিনি স্কুলে রূপান্তর করেছেন তিনি হলেন স্থপতি রেজয়ানুল হক । অসাধারন এক প্রতিভার মানুষ । যার প্রতিটা চিন্তা আমাকে অনুপ্রানিত করে । যাইহোক চলেআসি আমার নিজের গল্পে, আমি তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি । তখন আমাদের এলাকাতে নৌকাস্কুল সবে যাত্রা শুরু করেছে । আমরা সবাই বিস্মিত হতাম যথন নৌকাস্কুল আত্রাই নদী দিয়ে যেত । আমরা সবাই ভাবতাম এটা আবার কি?
যাইহোক প্রতিদিন স্কুলে যাই আসি আর আসার সময় দেখি নদীর ঘাটে ওই নৌকা দারানো তখন এ বিষয়ে কিছু ভাবতাম না । মনে হত কোন কারনে দারিয়ে আছে আবার কিছুক্ষন পর চলে যাবে । কিন্তু লক্ষ করি ওই নৌকা নিয়মিতই ওখানে দারায় এবং নির্দিষ্ট সময় অন্তর ছেড়ে যায় । নৌকাগুলো দেখতে ছিল অদ্ভুত যেমন নৌকাগুলোর উপরে একটি ঘড় সেই ঘড়ের উপর আবার ৮-১০ টি সোলার প্যানেল লাগানো, ভেতরে আবার কম্পিউটার এবং লাইব্রেরী(তবে এগুলো নৌকার ভেতর যাবার আগে জানতাম না) যাইহোক একদিন স্কুল থেকে ফেরার সময় কৌতুহল থেকেই নৌকার কাছে এগিয়ে গেলাম । বাহিরে দারিয়ে ভেতর দিকে একটি উকি দিলাম দেখলাম কয়েকজন মানুষ বসে আছে আর দুই থেকে তিনজন দুইটি কম্পিউটার চালাচ্ছে এবং তাদের কে এক মহিলা মম্পিউটার চালানো শেখাচ্ছে।  কিছুক্ষন দারাতেই শাপলা ম্যাডাম অর্থাৎ সেই কম্পিউটার ট্রেইনার মহিলা বাহিরের দিকে এগিয়ে আসলেন এবং আমাকে জিঙ্গেস করলেন, “তোমার নাম কি?” এবং বললেন “ভেতরে আসো” । আমি একটু অবাক হলাম কারন আমি ওখানকার কিছুই জানতাম না তাহলে কেন আমাকে ভেতরে যেতে বলছে । যাইহোক শংসয় নিয়েই ভেতরে ঢুকলাম । ভেতরে যাবার পর এক ভাই(লাইব্রেরিয়ান) আমাকে বললো সেল্ফ থেকে বই নাও নিয়ে পড় । আমি একটি গল্পের বই নিলাম এবং পড়তে শুরু করলাম । এবং ভাবছিলাম এরা অযথা কেন আমাকে পড়তে বলছে? পড়ছিলাম এবং কম্পিউটার শেখানো দেখছিলাম । সেই সময়ে গ্রাম বাংলায় কম্পিউটার বিষয়টা বলতে গেলে একেবারেই অপরিচিত ছিল । আমি অবাক হচ্ছিলাম কারন একেত কম্পিউটার একেবারেই অপরিচিত তারউপর দেখি কম্পিউটারটি একটি পিচ্ছি বাচ্চা চালাচ্ছে । আমি অবাক এবং বিস্মিত দুটো একসাথেই হচ্ছিলাম কারন বিষয় গুলা আমার কাছে অদ্ভুত লাগছিল । এর মধ্যে ম্যডাম (শাপলা ম্যাডাম) এসে আমাকে বললেন তুমি কালথেকে নিয়মিত আসবে, লাইব্রেরী থেকে বই নেবে এবং কম্পিউটার শিখবে । আমি শুনেতো  ‍পুরা হতবাক । আমি এই নৌকা বিষয়ে কিছু যানিনা এবং আমি এখানকার ছাত্রও না এমনকি আজকে আমি এখানে ভর্তিও হই নাই । তাহলে কিভাবে আমি কাল থেকে এখানে শেখা শুরু করবো । তবে যাইহোক বিষয়টাতে আমি খুবি আনন্দিত হচ্ছিলাম এবং ভেতরে ভেতরে শিহরণ অনুভব করছিলাম যে কালথেকে আমি কম্পিউটার শিখবো? । সত্যিই আশ্চার্য্য লাগছিল সেই মুহুর্তে । আমার মনে আছে সেই রাতে আমার ভাল ঘুম হয়নি । শুধু কম্পিউটার নিয়ে ভেবেছিলাম । তার পর থেকে ওই যে কম্পিউটারের প্রেমে পরলাম এখনো ছাড়তে পারি না এবং ভবিষ্যতেও এটা ছাড়া সম্ভব না । তারপর থেকে আমার শেখা চলতেই থাকলো ক্লাস টেন অবধি । আমাদেরকে শেখাতো এবং মাসে একদিন করে প্রোগ্রামে নিয়ে যেত । প্রোগ্রামটা হল যে দিন বিদেশ থেকে ভিসিটর আসত সেই দিনটাকে  প্রোগ্রাম বলা হত । প্রতি ১৫ দিন অন্তর অন্তর বিভিন্ন দেশ থেকে ভিসিটর আসতো এবং আমাদেরকে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করত তারপর যদি নৌকার কার্যক্রম ভাল লাগতো তাহলে ডোনেট করে চলে যেত । ওদের শেখানোর শিডিউলটা ছিল ঠিক এইরকম সপ্তাহে
তিন দিন নৌকাস্কুল আসতো এবং বাকি তিন দিন অন্য এলাকায় যেত । এক দিনে একটি নৌকা তিনটি ঘাটে শেখাতো প্রথম সকাল ৯ টায় এক ঘাটে তারপরে দুপুর ১১ টায় আরেক ঘাটে এবং দুপুর ১টায় আরেক ঘাটে । প্রতি দিন কম্পিউটার শেখানোর পাশাপাশি শেখানো হত ইন্টারনেট । তখন ইন্টারনেটের স্পিড এতোটাই স্লো ছিল যা বলার মত না । তারপরেও আমাদেরকে শেখাতো ওই স্পিড দিয়েই ।  নৌকায় ৮-১০ টি সোলার প্যানেল ছিল সেই ছোলার দিয়ে ব্যাটারি গুলা চার্জ হত তারপর সেই ব্যাটারি থেকে IPS দিয়ে বিদ্যূৎ উৎপাদন করে কম্পিউটার চালানো হত । নৌকার ভেতরের সেকশন ছিল দুইটি একটি হল কম্পিউটার ট্রেনিং সেকশন এবং আরেকটি হল লাইব্রেরী এবং একেবারে পেছনে থাকতো ইঞ্জিন রুম এবং নৌকাচালকের থাকার রুম । সত্যিই ভেতর টা অসাধারন ছিল । ভেতরে ঢুকলে মনে হত আমি অ্যমেরিকার কোন একটি জায়গাতে বেরাতে এসেছি । আর এই সকল নৌকা গুলো ডিজাইন করেছিলেন এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা স্থপতি রেজুয়ানুল হক নিজে ।  রেজয়ানিুল হক যে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই মহতি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সেই প্রতিষ্ঠানের নাম শীধুলাই স্বর্নিভর সংস্থা আপনাদের আরেকটি বিষয় বলা হয়িনি তা হল এই প্রতিষ্ঠানের যাবতিয় কার্যক্রম সম্পূর্ণ ফ্রি । এরা কোন স্টুডেন্টের কাছ থেকে কোন টাকা পয়সা নেয় না এই প্রযুক্তি শিক্ষা দেবার জন্য । এবং এই অনন্য অবদানের জন্য এই সংস্থা বিভিন্ন অন্তর্জাতিক সম্মাননা ঘড়ে তুলেছেন । তার মধ্য উল্লেখযগ্য হল জতিসংঘ্য থেকে পুরস্কার পাওয়া 2007 সালে । এবং তাদের কাযক্রমের জন্য বি.বি.সি,  সি. এন. এন, আলজাজিরা সহ বলতে গেলে সকল আন্তরজাতিক মিডিয়াতেই তারা ফিচার হয়েছে । এই সংস্থা বর্তমানে শুধু আমাদের জেলা নাটোরেই নয় পাশের জেলা পাবনা এবং সিরাজগঞ্জেও কার্যক্রম শুরু করেছে । শীধুলাই শুধু প্রান্তিক পর্যায়ে প্রযুক্তির আলো ছরিয়েই সিমাবদ্ধ নেই তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে মানুষের মাছে কৃষি বিষয়ক ট্রেনিং এবং নদী ভাংঙ্গন প্রতিরোধ বিষয়ক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে তারা যে এলাকাতে এখন বিদ্যৎ পৌছায়নি সেই এলাকার বাচ্চাদের লেখাপরার জন্য চার্জার ল্যাম্প প্রদান করে । নৌকা খেকে ল্যাম্প গুলা নিয়ে যায় চার্জ ফুরিয়ে গেলে আবার নৌকায় নিয়ে এসে চার্জ দিয়ে নিয়ে যায় ।  সত্যিই নৌকা স্কুলের একজন ছাত্র হয়ে আমি নিজেকে গর্বিতই মনে করি । তোমার কার্যক্রম পরিচালনা করে যাও নৌকা স্কুল হাজার হাজার বছর এটাই আমাদের কামনা ।

0 comments:

Post a Comment